গভীর রাত। ঘুম ভাঙলো হঠাৎ। জানালার ফাঁক দিয়ে দেখি, চাঁদটা যেন এক টুকরো কাগজের মতোন সাদা। কেমন যেন একা লাগছে ওকে, আকাশের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে একা একা।
কিছুদিন আগে এক বিকেলে নাতি এসে জিজ্ঞেস করেছিলো, “দাদু, চাঁদ কি কাঁদে?” আমি বলেছিলাম, “কেন কাঁদবে চাঁদ?” ও বললো, “একা একা ঘুরতে ঘুরতে হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তাই হয়তো কাঁদে।”
আমার বুকটা হু হু করে উঠেছিল। এই ছোট্ট শিশুর মনের ভাবনায় যেন আমার নিজের অবস্থারই প্রতিফলন দেখলাম। কতদিন আমিও তো একা একা ঘুরছি এই পৃথিবীতে। সঙ্গী-সাথী সবাই হারিয়ে গেছে, একমাত্র স্মৃতিগুলো ছাড়া।
তারপর একদিন, এক পূর্ণিমার রাতে, চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, চাঁদটাকে যেন মনে হচ্ছে একটা রুপোলি থালা। কেউ যেন ওই থালায় করে আমার সব দুঃখ-কষ্ট, সব আনন্দ-বেদনা সাজিয়ে দিয়েছে। কখনো কখনো সেই থালা থেকে যেন ভেসে আসে অতীতের সুর, কখনো বা ভবিষ্যতের আভাস।
চাঁদটা যেন সব জানে, সব বোঝে। আমার মনের গোপন কথাগুলোও যেন চাঁদ শুনতে পায়। আমি যখন খুশি, তখন চাঁদটাও যেন হেসে ওঠে। আর যখন আমার মন খারাপ, তখন চাঁদটাও যেন মলিন হয়ে যায়।
আমার জীবনে যত মানুষ এসেছে, সবাই চলে গেছে। কিন্তু চাঁদটা রয়ে গেছে। আমার সুখে-দুঃখে, আনন্দে-বেদনায়, সবসময় আমার পাশে ছিল চাঁদ।
আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমার মা আমাকে চাঁদের গল্প শোনাতেন। সেই গল্পগুলো শুনে আমি মনে মনে ভাবতাম, চাঁদে কি সত্যিই পরীরা থাকে? চাঁদের আলোয় কি সত্যিই স্বপ্ন সত্যি হয়?
বড় হয়ে বুঝলাম, পরী বা স্বপ্ন সত্যি না হলেও, চাঁদের আলোয় একটা অদ্ভুত মায়া আছে। সেই মায়া আমাদের কল্পনার জগৎকে উজ্জীবিত করে, আমাদের স্বপ্নগুলোকে ডানা দেয়।
আজ রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, আমার জীবনের শেষ দিনটিও হয়তো এমন এক চাঁদের আলোয় কাটবে। তখন আমার পাশে থাকবে শুধু আমার স্মৃতিগুলো। আর আমি চাঁদের আলোয় ভেসে ভেসে চলে যাবো অন্য এক জগতে, যেখানে নেই কোনো দুঃখ, নেই কোনো বেদনা। শুধু আছে শান্তি আর আনন্দ।