একঘেয়েমি আর এক জীবনের অবসাদ থেকে মুক্তি কার না চায়! দিনের পর দিন যান্ত্রিক জীবন যাপন যেন এক সময় অসহ্য হয়ে ওঠে। তবুও জীবিকার তাগিদে দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। কিন্তু এই কর্মময় জীবনে আনন্দ খুঁজে পাওয়াটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তত্ত্বের অবতারণা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, কাজের বৈচিত্র্য আর স্বাধীনতা।
কর্মব্যস্ত জীবনে স্বাধীনতা খুঁজে পাওয়া, কাজের মধ্যে নতুনত্বের ছোঁয়া পাওয়া, নিজ দায়িত্বে নিজের কাজ সম্পাদন করা – এসব কি আদৌ সম্ভব? এসবই সম্ভব, যদি আমরা আমাদের কাজের ধরনকে বৈচিত্র্যময় করে তুলি এবং নিজেদের কাজে স্বাধীনতা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে পারি।
একঘেয়েমি কাজের প্রতি অনীহা তৈরি করে, উদ্যম হরণ করে নেয়। কর্মী যখন একই কাজ বারবার করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তখন তার কাজের গতি শ্লথ হয়ে আসে। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। এ অবস্থায় কাজের ধরনকে বৈচিত্র্যময় করে তোলা খুবই জরুরী।
ধরা যাক, একজন কর্মী একটি পোশাক কারখানায় সেলাই মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন। তার কাজ হল, একই ধরনের পোশাকের একই অংশ বারবার সেলাই করা। এ ধরনের কাজ করতে করতে যে কেউ একঘেয়ে হয়ে পড়বেন। কিন্তু যদি তাকে বিভিন্ন ধরনের পোশাকের বিভিন্ন অংশ সেলাই করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে তার কাজের বৈচিত্র্য আসবে। ফলে তার কাজের প্রতি অনীহা দূর হবে। সে আরও উৎসাহ নিয়ে কাজ করতে পারবেন। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতাও বাড়বে।
শুধু কারখানাতেই নয়, যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই কাজের ধরনকে বৈচিত্র্যময় করে তোলা সম্ভব। অফিসের একজন কর্মচারী সব সময় যদি একই ধরনের কাজ করে থাকেন, তাহলে তিনি একঘেয়ে হয়ে পড়বেন। তাকে যদি বিভিন্ন ধরনের কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে তিনি তার কাজে আনন্দ খুঁজে পাবেন।
কাজের বৈচিত্র্য আনার জন্য কর্মীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে। নতুন নতুন কাজ শেখার মাধ্যমে তারা নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারেন। এতে তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
কর্মীদেরকে কাজের স্বাধীনতা দেয়াও জরুরি। নিজের মতো করে কাজ করার সুযোগ পেলে তারা আরও বেশি উৎসাহী হয়ে কাজ করতে পারেন। একজন কর্মী যদি তার নিজস্ব বিবেচনাবোধ অনুযায়ী কাজ করতে পারেন, তাহলে তিনি কাজের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হয়ে উঠবেন। এতে তার কাজের মানও উন্নত হবে।
অফিসের একজন কর্মচারীকে যদি কোনো সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে তিনি সেই সমস্যা সমাধানে নিজের সৃজনশীলতা কাজে লাগাতে পারেন। এতে তার কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
কর্মীদেরকে দায়িত্বশীল করে তোলাও কাজের আনন্দ বাড়ানোর একটি উপায়। যখন একজন কর্মী নিজের কাজের ফলাফলের জন্য দায়িত্বশীল থাকেন, তখন তিনি আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন। এতে তার কাজের মান উন্নত হয়।
কর্মীদেরকে উৎসাহিত করার জন্য পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পুরস্কার পেলে তারা আরও বেশি উদ্যম নিয়ে কাজ করতে পারেন।
কাজের বৈচিত্র্য, স্বাধীনতা এবং দায়িত্ববোধ বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মীদের কাজের প্রতি অনীহা দূর করা সম্ভব। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতাও বাড়বে।
তবে শুধু প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেই কর্মীদের কাজের আনন্দ বাড়ানো সম্ভব নয়। কর্মীদেরও নিজেদের কাজের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে। নিজের কাজকে ভালোবাসতে হবে। কাজের প্রতি অনীহা থাকলে যেকোনো কাজই একঘেয়ে মনে হবে।
আমাদের সবারই মনে রাখা উচিত, কাজ শুধু জীবিকা নির্বাহের একটি উপায় নয়। কাজ আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজের মাধ্যমেই আমরা আমাদের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করতে পারি। কাজের মাধ্যমেই আমরা সমাজে আমাদের অবদান রাখতে পারি। তাই কাজকে ভালোবাসুন। কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে নিন। দেখবেন, আপনার জীবন হয়ে উঠবে আরও সুন্দর, আরও আনন্দময়।