বাতিঘরের আলো: এপিকটেটাসের দর্শন-দীপ্ত আয়না

Estimated read time 1 min read

আজ গভীর রাতে পড়ছিলাম এপিকটেটাসের “Enchiridion”। প্রাচীন গ্রিসের এই স্টোইক দার্শনিকের কথাগুলো যেন আজ আমার মনকে নাড়া দিয়ে গেল। আমাদের জীবনে যে কত নানান ঝড়-ঝাপটা আসে, কত বাধা-বিপত্তি, অশান্তি! এই দুর্যোগপূর্ণ সমুদ্রে দিশাহারা হয়ে না গিয়ে তীরে ভিড়তে হলে দরকার একটা বাতিঘর। আর সেই বাতিঘরের আলো যেন জ্বালিয়ে দিলেন এপিকটেটাস।

মনে পড়ে গেল ছোটবেলার কথা। বাড়ির উঠোনে আম গাছে উঠেছিলাম। উঠতে উঠতে শাখা ভেঙে হঠাৎ নিচে পড়ে গেলাম। হাত-পা কেটে রক্তারক্তি। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, কেঁদেছিলাম। তখন বাবা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, “দেখিস, এই কষ্টটাও একদিন চলে যাবে। সব কষ্টের একটা শেষ আছে।” বাবার সেই কথাটা তখন হয়তো ঠিক বুঝতে পারিনি, কিন্তু এপিকটেটাসের লেখা পড়ে সেই কথার মানে আজ আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করলাম।

এপিকটেটাস বলেছেন, “সুখ বা দুঃখ, এসব আসলে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমরা শুধু আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।” আমাদের জীবনে কী ঘটবে সেটা হয়তো আমরা ঠিক করতে পারি না, কিন্তু সেই ঘটনাকে আমরা কীভাবে দেখব, কীভাবে মোকাবিলা করব, সেটা আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত।

মনে হলো যেন এপিকটেটাসের দর্শন আমাদের জীবনের একটা আয়না। এই আয়নায় আমরা আমাদের মনের ভালো-মন্দ, শক্তি-দুর্বলতা সবই দেখতে পাই। জীবনের চড়াই-উতরাইয়ে, সুখ-দুঃখে এই আয়নাটাকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারলে আমরা হয়তো আরও সাহসী, আরও ধৈর্যশীল হয়ে উঠতে পারব।

বইটা থেকে আমি কয়েকটা কথা মনে রাখার চেষ্টা করব:

  • নিজের মনের ওপর কর্তৃত্ব: আমি যা ভাবছি, যা অনুভব করছি, তার ওপর আমারই নিয়ন্ত্রণ আছে।
  • কৃতজ্ঞতা: আমার জীবনে যা কিছু ভালো আছে, তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকব।
  • সময়ের মূল্য: জীবন খুব ছোট। সময়ের সদ্ব্যবহার করব।

বইটা বন্ধ করে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। আকাশে ঝিকমিক করছে তারা। মনে হলো, এই অসংখ্য তারার মতোই আমাদের জীবনেও আছে অসংখ্য সম্ভাবনা। আজ থেকে আমি এপিকটেটাসের দর্শনকে সঙ্গী করে সেই সম্ভাবনাগুলোকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।

You May Also Like