চাই জীবনের পূর্ণাঙ্গতা

Estimated read time 1 min read

আপনার মাঝে যদি এমন ধারণা জন্মে থাকে যে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে দরিদ্র হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, এবং এটি তারই ইচ্ছা যে আপনি দরিদ্র থাকেন – তাহলে এই মুহূর্তে এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনি যতক্ষণ এই ধারণা পোষণ করছেন ততক্ষণ দরিদ্রই থাকবেন। এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হবে যদি আপনি ভাবেন যে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সৃষ্টি করেছেন আপনার ভালর জন্য – দারিদ্রের যাঁতাকলে পিষ্ট করে শাস্তি দেয়ার জন্য না।

আদি শক্তি নিরাকার এবং নিরাকার বলেই তা সর্বত্র অবস্থান করতে পারে এবং করে। সেটি আপনার মাঝেও অবস্থান করতে পারে। এই শক্তি জীবন্ত, মহাশক্তিময়। এর প্রধান উদ্দেশ্য জীবনকে বর্ধিত করা – জীবনকে পূর্ণাঙ্গ করে তোলা। আপনার মাঝে জীবনকে পূর্ণাঙ্গ করে তোলার আকাঙ্ক্ষা যত তীব্র হবে এই শক্তি আপনার মাঝে ততই বেশি আবাস গাড়বে।

মাটিতে একটি বীজ ফেলে দেয়া হলে সেটি থেকে জীবনের উদ্ভব হয়, সেটি গাছে পরিণত হয়, সেই গাছ থেকে আরো অজস্র গাছের জন্ম হয়। এভাবে জীবন নিজেকে বাড়াতে থাকে। মানুষের জীবনও তেমনি। এক জীবন থেকে জন্ম নেয় বহু জীবনের, এটি ক্রমাগত বেড়ে চলছে, এবং চলতেই থাকবে। এটি বাড়া বন্ধ হলেই জীবনের ঘটবে অবসান।

চেতনাও তেমনি। চেতনার স্বভাব হলো বেড়ে চলা, জীবনের বিকাশের মতোই। আমরা যখনই কোনো একটি চিন্তা করি তখন আরো চিন্তা করার দরকার হয়। এক চিন্তা আরেক চিন্তার জন্ম দেয়; ক্রমাগত সচেতনতার বিস্তৃতি ঘটে। প্রতিটি সত্য জানার পর আমরা আরো সত্য জানার দিকে ধাবিত হই; আমাদের জ্ঞান ক্রমশ বর্ধিত হতে থাকে। আমাদের কোনো একটি প্রতিভাকে বিস্তৃত করলে তার সাথে আরো অনেক প্রতিভা বিকশিত হতে থাকে; একটি সুকুমার বৃত্তি জন্ম দেয় অন্যান্য সুকুমার বৃত্তির। আমাদের চিন্তা অনবরত প্রকাশের মাধ্যম খুঁজতে থাকে, আর এই মাধ্যম খুঁজতে খুঁজতে সেটি বিস্তৃত হতে থাকে; বাড়তে থাকে চিন্তা, বাড়তে থাকে তার প্রকাশ।

বেশি জানতে, বেশি করতে, আমাদের জীবনকে আরো বেশি দিয়ে ভরিয়ে তুলতে আমাদের আরো অনেক বেশি জিনিস থাকতে হবে; আমাদের হাতে বেশি বস্তু থাকতে হবে যা দিয়ে আমরা আরো বেশি শিখতে, করতে এবং হতে পারি। আমাদের সম্পদশালী হতে হবে, যাতে আমরা আরো বেশি সমৃদ্ধভাবে বাঁচতে পারি।

সম্পদের প্রতি আকাঙ্ক্ষা মানে আমাদের জীবনকে আরো সমৃদ্ধ করে তোলার আকাঙ্ক্ষা; যে আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে পারব, নিজেদের পূর্ণাঙ্গ মানুষ করে তুলতে পারব; আমাদের মধ্যকার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারব, নিজেদের প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাব। আমাদের এসব ক্ষমতার বিকাশের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটে সম্পদের প্রতি ভালবাসায়। জীবন ক্রমাগত তার বিকাশ চায়, বৃদ্ধি চায়।

আমাদের আদি শক্তি – যেখান থেকে সৃষ্টি সবকিছুর – জীবনের এই নিয়ম মেনেই চলে। এর মাঝে সুপ্ত আছে আরো বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা; আর এ কারণেই এই শক্তি ক্রমাগত জিনিসের সৃষ্টি করে চলেছে।

এই আদি শক্তি আপনার মাঝেও আরো বেশি করে বেঁচে থাকতে চায়; আর এজন্যই এটি চায় আপনি আরো বেশি করে সম্পদের মালিক হোন যা আপনি ব্যবহার করতে পারেন এবং সেই আদি শক্তিকে পূর্ণাঙ্গরূপে বেঁচে থাকতে সাহায্য করেন।

স্রষ্টার ইচ্ছে যে আপনি ধনী হোন। স্রষ্টার ইচ্ছে আপনি ধনী হোন, কারণ এর মাধ্যমে তিনি তাঁর মহত্ত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে পারেন। সৃষ্টিকে দরিদ্র রেখে স্রষ্টার মহত্ত্ব প্রকাশ পায় না, স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির সার্থকতা প্রদর্শন করতে পারেন না। আপনি ধনী হলে স্রষ্টার মহিমা কীর্তন করার সময় আপনার হবে, আপনি ধনী হলে স্রষ্টার প্রশংসা করার সময় আপনি বেশি পাবেন, আপনি ধনী হলে স্রষ্টার মহিমাকে আপনি প্রকাশ করবেন। আপনি যদি জীবনকে অনেক উপায়ে প্রকাশ করতে পারেন, নির্বাহ করতে পারেন – তাহলেই সেই শক্তি আপনার মাঝে প্রকাশ পায় আরো ভালভাবে।

এই বিশ্ব চায় আপনি যা চান তাই আপনার অধিকারে থাকুক।

এই বিশ্ব প্রকৃতি আপনার পরিকল্পনার জন্য সহায়ক।

এখানে আপনার জন্য যা কিছু ঘটে স্বাভাবিকভাবেই ঘটে।

বিশ্বাস করুন যে এটি সত্য।

তবে দরকারী কথা হলো আপনার উদ্দেশ্য এমন হতে হবে যা আর অন্য সকলের উদ্দেশ্যের সাথে মেলে। স্রষ্টার উদ্দেশ্য সৃষ্টি করা, জীবনের বিকাশ ঘটানো, জীবনকে সুন্দর করা। আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় সৃষ্টির ধ্বংস সাধন, আর জীবনকে কলুষিত করা তাহলে সেটি স্বাভাবিক না, সেটি আরোপিত।

আপনাকে অবশ্যই সত্যিকার জীবন চাইতে হবে, কেবল ইন্দ্রিয়সুখ নয়। জীবন হলো কিছু কাজের সমষ্টি, যেসব কাজের থাকে কিছু মহৎ উদ্দেশ্য; আর কোনো মানুষ তখনই পূর্ণাঙ্গরূপে বাঁচে যখন সে এসব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে – শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে। এসব কাজ তার সাধ্যের মধ্যেই, এবং অবশ্যই তার প্রয়োজনের বাইরে নয়, লোভের বশবর্তী হয়ে নয়।

আপনি কেবল মানসিক প্রসাদ, জ্ঞানার্জন, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়া কিংবা বিখ্যাত হওয়ার জন্য সমৃদ্ধি অর্জন করবেন না। আপনার জীবনযাপনের জন্য এসব অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এগুলিই সব নয়। কোনো মানুষ কেবল তার বুদ্ধিমত্তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য বেঁচে থাকলে সে জীবন পূর্ণাঙ্গ জীবন হয়ে উঠবে না।

আপনি কেবল অন্যদের ভাল চাইবেন এবং সেজন্য নিজের জীবনকে বিসর্জন দেবেন তাও নয়। অন্যকে আনন্দ দিয়ে আপনি যে আনন্দ পাবেন তা আংশিক। আর এভাবে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা অন্য কোনো কাজের চেয়ে ভাল বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ নেই।

আপনি সমৃদ্ধি চাইবেন খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য, আনন্দে থাকার জন্য; এই জন্য যে আপনি আপনার চারপাশকে সুন্দর জিনিস দিয়ে ভরে তুলতে পারবেন, দূরের অনেক সুন্দর দেশ দেখতে পাবেন, আপনার মনের খোরাক যোগাতে পারবেন, এবং আপনার বুদ্ধিমত্তাকে উন্নত করতে পারবেন; এই জন্য যে আপনি মানুষকে ভালবাসতে পারবেন, তাদের জন্য ভাল কিছু করতে পারবেন, এবং এভাবেই সত্য খুঁজে পাওয়ার জন্য এ পৃথিবীর মানুষদের সাহায্য করতে পারবেন।

তবে এটিও মনে রাখতে হবে যে চরম পরার্থপরতা কোনো অংশেই চরম স্বার্থপরতার চেয়ে ভাল নয়; দু’টোই ভ্রান্তি। আপনাকে থাকতে হবে এ দু’য়ের মাঝে।

ঈশ্বর আপনাকে অন্যের সেবায় আত্মদান করতে পাঠিয়েছেন এমন কথা ভুলে যান। এটি করে আপনি তার আনুকূল্য লাভ করবেন এমন আশাও বাদ দিন। ঈশ্বর এরকম কিছু চান না।

তিনি যা চান তাহলো আপনার নিজের সর্বোচ্চ বিকাশ এবং সেইসাথে অন্যের বিকাশে সাহায্য করা। আপনি নিজের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমেই অন্যের বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করতে পারবেন সবচেয়ে বেশি।

আপনি নিজের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে পারবেন নিজে ধনী হওয়ার মাধ্যমে। তাই সঠিক ও প্রশংসনীয় কাজ হবে নিজের দিকে নজর দেয়া, নিজেকে সমৃদ্ধ করা। নিজেকে নিয়োজিত করুন সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য।

মনে রাখবেন যে সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা সবার জন্য – এটি কেবল আপনার জন্য নয়। আপনি নিজে ধনী হবেন আর অন্য সবাইকে দরিদ্র করে রাখবেন এমন চিন্তা কাজ করবে না।

আমাদের মাঝে যে অসীম শক্তি বিরাজ করে তাই আমাদের সুখের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু তৈরি করবে; এজন্য অন্যের কাছ থেকে কোনো বস্তু ছিনিয়ে আনার দরকার নেই। স্রষ্টা অন্যের কাছ থেকে কোনো বস্তু ছিনিয়ে নিয়ে আপনাকে দেবেন তেমন ভাবার কোনো অবকাশ নেই।

তাই প্রথমেই আপনাকে প্রতিযোগিতার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আপনার কাজ হবে সৃজন, প্রতিযোগিতা করে অন্যের সৃষ্টিকে ছিনিয়ে নেয়া নয়।

বস্তুত কারো কাছ থেকে কিছু নিয়ে নেয়ার দরকার আপনার কখনই হবে না।

আপনাকে দরকষাকষি করতে হবে না।

কাউকে প্রতারণা করার দরকার নেই, কাউকে কাজে লাগিয়ে নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধিরও দরকার হবে না। কাউকে কম পারিশ্রমিকে কাজে লাগিয়ে সেখান থেকে আপনি দু’পয়সা কামাবেন তেমন পরিকল্পনারও দরকার নেই।

অন্যের সম্পদের দিকে লোভাতুরভাবে তাকানো কিংবা সেসব কুক্ষিগত করার পরিকল্পনারও দরকার নেই; অন্যের সম্পদ কুক্ষিগত করা ছাড়াও আপনি সেই সম্পদ নিজের জন্য তৈরি করতে পারেন।

এজন্য আপনাকে সৃজনশীল হতে হবে, প্রতিযোগী নয়; আপনি এমন কোনো জিনিস পেতে যাচ্ছেন যা পেলে অন্যরাও সমানভাবে তা পাবে – তাদের ভাগে কমতি হবে না। বস্তুত আপনি যদি সৃজনের নিয়ম প্রয়োগ করেন তাহলে আপনি যা পাবেন অন্যরাও তেমনি তা পাবে। এর ফলে সবাই সমৃদ্ধ হবে, কেবল আপনি নন। আর প্রতিযোগিতায় গেলে আপনি লাভবান হলেও অন্য কেউ না কেউ লোকসান গুণবে। কারণ এখানে আপনি নূতন কিছু সৃষ্টি করছেন না, আগের সৃষ্টিকেই দখল করছেন। আজকের বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে তা এই প্রতিযোগিতারই ফল। একে উৎরানো সম্ভব সৃজনের নিয়মের মাধ্যমে।

তবে এটিও ঠিক যে আপনার চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা উপরে ওই নিয়মের বিপরীত কাজ করেই অনেক ধনী হয়েছে। এটির কিছু ব্যাখ্যা দরকার অনেকের কাছেই। কিছু মানুষ অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী থাকেন এবং সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে তারা প্রতিযোগিতার রাজ্যেও বিপুল বিত্ত অর্জন করতে সমর্থ হয়ে থাকেন; এবং কখনও কখনও তারা তাদের এই ব্যক্তিগত সাফল্যকে পুরো গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত করে জাতি গঠনের জন্য উঠে-পড়ে লাগেন। রকফেলার, কার্নেগি, মরগ্যান প্রমুখ এধরনের লোকের উদাহরণ। তাঁরা যে কাজ করে গেছেন তা শিল্পক্ষেত্রে এক ধরনের বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে, এবং ব্যাপকভাবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনের মানোন্নয়নে সহায়তা করেছে। তবে একথাও মনে রাখতে হবে যে তাঁদের দিন শেষ; তাঁরা উৎপাদন প্রক্রিয়া ছকে বেঁধে ফেলেছেন, এরপর তাঁদের উত্তরসূরী হিসেবে দেখা দেবেন এমনসব মানুষ যাদের মূল কাজ হবে উৎপাদিত পণ্যের বিতরণকে নিয়ন্ত্রণ করা।

এসব লাখপতি-কোটিপতিদের ক্ষেত্রে একটি কৌতুহলোদ্দীপক বিষয় হলো এই যে যে শক্তি তাদের এত বিত্ত দিয়েছে, সেই একই শক্তি তাদেরকে বিত্তহারা করে ছাড়বে। এরা সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিশালাকৃতির সরীসৃপ, যারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করতে থাকবে। এবং বাস্তবেও তাই ঘটেছে। এসব ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কেউই আসলে ধনী নয় – সেটি পরিষ্কার বোঝা যাবে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের দিকে তাকালে। তাদের ব্যক্তি জীবনের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন যে তারা দরিদ্রদের চেয়েও অসহায় ও দু:খময় জীবন কাটিয়েছেন।

প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ কখনো সন্তুষ্টি দিতে পারে না, এবং তা স্থায়ীও হয় না – সেসব সম্পদ আজ আপনার, কাল অন্যের। তাই আপনাকে মনে রাখতে হবে যে বৈজ্ঞানিক ও ন্যায়সঙ্গত উপায়ে ধনী হতে চাইলে আপনাকে প্রতিযোগিতার চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আপনার মনে কখনো যেন এ চিন্তার উদ্রেক না হয় যে সম্পদের সরবরাহ সীমিত। আপনার মনে যদি কখনো এ চিন্তার উদ্রেক হয় যে সমস্ত অর্থ ও সম্পদ ব্যাংকার ও ধনী শ্রেনীর হাতে কুক্ষিগত হয়ে আছে এবং এটি বন্ধ করার জন্য আইন প্রণয়ণ করা দরকার – তাহলেই আপনি বিপথে গেলেন, আপনার চিন্তা ধাবিত হচ্ছে প্রতিযোগিতার রাজ্যে। আর প্রতিযোগিতার এই রাজ্যে প্রবেশ করা মাত্র আপনার সৃজনের ক্ষমতা রহিত হবে। আপনি নূতন সম্পদ সৃষ্টির ক্ষমতা হারাবেন। এটি আরো নিকৃষ্ট রূপ নিতে পারে, সৃজনের ক্ষমতা কিংবা সে সম্পর্কে চিন্তা করার ক্ষমতাও চিরতরে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

ধরে নিন যে আপনি যে অর্থ ও বিত্ত চান তার সবই আছে, পর্যাপ্ত পরিমাণেই আছে; কোথাও কোনো ঘাটতি নেই। ধরে নিন যে পৃথিবীতে যত পাহাড় আছে তার সবই সোনার, এখনও যদি সেসব মাটি হিসেবে দেখা যায় তবু ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আপনার যেই মুহূর্তে সোনার দরকার হবে প্রকৃতি সেসবকে সোনায় পরিণত করবে। সে সম্পদ আপনি চাচ্ছেন তা এখনও তৈরি না হয়ে থাকলে শীঘ্রই তৈরি হবে, আপনার  এই বিশ্বাস যত প্রগাঢ় হবে তত শীঘ্রই তা তৈরি হবে।

মনে রাখবেন, আপনি যে অর্থ চাচ্ছেন তা আপনার হাতে আসবে। হাজারজন লোককে তার জন্য কাজ করতে হলেও ঘাবড়াবেন না – প্রকৃতি আপনার জন্য সেই ব্যবস্থা করবে।

বর্তমানে দৃশ্যমান সম্পদের দিকে তাকাবেন না; যা দৃশ্যমান তাই সব নয়, এর চেয়ে অনেক বেশি সম্পদ আছে যা দৃশ্যমান না। তাই দৃশ্যমান সম্পদের দিকে তাকিয়ে এর স্বল্পতা সম্পর্কে আঁতকে না উঠে বরং অসীম নিরাকার বস্তু বা শক্তির কথা চিন্তা করুন যেখান থেকে সকল বস্তু তৈরি হয়। ভাবতে থাকুন আপনি যা চান তা এই শক্তি থেকেই তৈরি হবে, এবং শীঘ্রই আপনি তা পাবেন যেই মুহূর্তে আপনি তা ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। দৃশ্যমান বস্তু দিয়ে আপনাকে কেউ সেসব পাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না।

তাই এক মুহূর্তের জন্যও ভাববেন না যে আপনি যে বাসা করতে চাচ্ছেন তার জন্য সুন্দর জায়গাটি অন্য কেউ দখল করে নেবে, কিংবা যে সুন্দর গাড়িটি দেখে এসেছেন সেটি অন্য কেউ নিয়ে নেবে। আপনি যা চান তাই আপনি পাবেন যদি আপনার চিন্তা সঠিক থাকে এবং আপনি প্রতিযোগিতায় না নামেন। কখনো মনে করবেন না যে আপনি যা চান তা অন্য কেউ ছিনিয়ে নেবে, আপনি যা চান তা অন্য কারো দখলে চলে যাবে। সেটি ঘটবে না, কারণ আপনি এমন কিছু চাচ্ছেন না যা অন্যের দখলে, আপনি নূতন কিছু সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন, আপনি মহাশক্তিধরের নিকট আপনার জন্য নূতন কিছু সৃষ্টি করতে বলছেন। আর সেই মহাশক্তিধর মহাবিশ্বের মহাশক্তি থেকে আপনার জন্য অসীম বস্তু তৈরি করতে পারে, এর কমতি কখনোই হবে না, সেই শক্তির ঘাটতি হবে না – যতক্ষণ না আপনি নিজেই আপনার কল্পনার মাধ্যমে সেই সীমাবদ্ধতা তার উপর আরোপ করছেন। এপর্যন্ত আমরা যে উক্তি পেলাম তার প্রতি লেগে থাকুন:

একটি আদি শক্তি রয়েছে যা চিন্তা করতে পারে এবং এই আদি শক্তি থেকেই সবকিছুর উদ্ভব,এটি এর আদি অবস্থায় এ বিশ্বজগতের সকল স্থান পূর্ণ করে রাখে।

এই শক্তির মাঝের কোনো চিন্তাই বস্তুর তৈরি করে,এই শক্তি যা চিন্তা করে সে অনুসারেই বস্তু আকার লাভ করে।

মানুষ তার চিন্তায় কোনো বস্তুর আকার দিতে পারে,এবং এই আকার আদি নিরাকার শক্তিকে জানানোর মাধ্যমে তার চিন্তার বস্তু তৈরি করতে পারে।

You May Also Like