নগরের নি:সঙ্গতা

Estimated read time 1 min read

সন্ধ্যা নামছে ঢাকা শহরে। একরাশ ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছি। গাড়ির জানালা দিয়ে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছি চারপাশ। একটু আগেই তো কান ফাটানো শব্দ আর যানজট, আর এখন সব যেন থেমে গেছে। যেন এই শহরও ক্লান্ত, আমার মতোই।

ফুটপাতে বসে থাকা এক বৃদ্ধ চায়ের দোকানির দিকে চোখ আটকে গেল। তার চোখে এক অন্যরকম শূন্যতা, যেন অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। হয়তোবা নিজের সন্তানের অপেক্ষায় বসে আছেন, নয়তো নিজের অতীতের স্মৃতিতে হারিয়ে যাচ্ছেন। কে জানে!

আমার নিজের অতীতের স্মৃতিও ভিড় করে আসে। একসময় এই শহরটা অনেক ছোট ছিল, অনেক সহজ। মায়া-মমতায় ভরা মানুষগুলোর সাথে ছিল এক অন্যরকম সম্পর্ক। এখন সব যেন বদলে গেছে। সবারই যেন ব্যস্ততা, নিজের জীবনের সাথে লড়াই। কেউ কারো খোঁজ রাখে না।

বাড়ি ফিরে বারান্দায় বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকি। তার আলোয় মনটা ভরে ওঠে। তবুও একটা শূন্যতা থেকে যায়। এই শহরে এত মানুষ, তবুও কেন এত নিঃসঙ্গতা? কেন মনে হয় কেউ কারো নয়?

কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু আমেরিকা থেকে ফিরেছে। ও বলছিল, ওখানেও মানুষ একই রকম নিঃসঙ্গ। বিশাল বিশাল বাড়ি, সুন্দর গাড়ি, সবই আছে, কিন্তু মনটা শান্ত নয়। ও বলছিল, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে যে আন্তরিকতা, যে মমতা, তা ওখানে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মনে হলো, হয়তোবা আমরাও সেই পথেই হাঁটছি। উন্নতির নামে আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের মূল্যবোধগুলো, আমাদের সম্পর্কগুলো। আমরা হয়ে উঠছি যান্ত্রিক, নিষ্ঠুর।

কিন্তু এখনও সময় আছে। আমরা ফিরে যেতে পারি আমাদের শেকড়ের কাছে। আমরা আবার গড়ে তুলতে পারি সেই আন্তরিকতা, সেই মমতা। আমরা পারি একসাথে হয়ে এই নিঃসঙ্গতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে।

একটা নতুন দিনের স্বপ্ন দেখি। একটা এমন সমাজের স্বপ্ন দেখি, যেখানে সবাই সবার পাশে থাকবে, যেখানে কেউ নিঃসঙ্গ হবে না। হয়তোবা আমার এই স্বপ্ন সত্যি হবে, হয়তোবা হবে না। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই!

রাত আরো গভীর হয়। চাঁদের আলোয় শহরটা যেন একটু স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে। মনটা শান্ত হয়। হয়তোবা আগামীকাল এক নতুন দিন আসবে, এক নতুন সূর্য উঠবে। সেই সূর্যের আলোয় হয়তোবা এই শহরের নির্জনতাও মিলিয়ে যাবে।

You May Also Like