শৈশব হারানো শিশুরা: বিশ্ব শিশুশ্রম নিরসন দিবসের ভাবনা

Estimated read time 1 min read

আষাঢ়ের আকাশে কালো মেঘের দল যখন গর্জন করে বৃষ্টি নামায়, তখন মাঠে ঘাটে, কলকারখানায় খোলা আকাশের নিচে শিশুরা কাজ করছে। ফসলের ক্ষেতে, ইটভাটায়, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে, রাস্তার মোড়ে– সর্বত্রই শিশুর শ্রম। এ যেন চোখের সামনে এক অমানিশা নেমে আসে, যেখানে শিশুর হাসিমাখা মুখের বদলে দেখা যায় ক্লান্ত, বিবর্ণ এক প্রতিচ্ছবি। বিশ্ব শিশুশ্রম নিরসন দিবস আজ আমাদের সেই অমানিশার কথাই মনে করিয়ে দেয়।

শৈশবের স্বপ্ন, বাস্তবের নিষ্ঠুরতা: শিশু মানেই স্বপ্ন, শিশু মানেই আনন্দ। শিশুর কোলাহলে মুখরিত হওয়ার কথা আমাদের ঘরবাড়ি, পাড়া-মহল্লা। কিন্তু এই দেশের কোটি কোটি শিশু সেই স্বপ্ন দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। স্কুলের বই-খাতার বদলে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় কাজের জিনিসপত্র। খেলার মাঠের বদলে তাদের দৌড়াদৌড়ি হয় কারখানার অন্ধকার ঘরে। বাস্তবের এই নিষ্ঠুরতার কাছে হার মেনে শৈশবের স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় অন্ধকারে।

কারণ অনুসন্ধান: শিশুশ্রমের কারণ কী? দারিদ্র্য? অসচেতনতা? সামাজিক বৈষম্য? নাকি সবকিছুরই এক জটিল সম্মিলন? হ্যাঁ, দারিদ্র্য অন্যতম কারণ। অভাবের তাড়নায় বাবা-মা অন্নের সংস্থানের জন্য সন্তানদের কাজে পাঠাতে বাধ্য হয়। তবে দারিদ্র্যই একমাত্র কারণ নয়। সামাজিক অসচেতনতা, শিক্ষার অভাব, এমনকি কখনো কখনো অর্থলোভও শিশুশ্রমের জন্য দায়ী। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের সস্তা শ্রম হিসেবে ব্যবহার করে মুনাফা লাভের আশায় অনেক অসাধু ব্যবসায়ী তাদের নিয়োগ করে।

আইন আছে, প্রয়োগ নেই: আমাদের দেশের আইনে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে এই আইনের প্রয়োগ কতটা হচ্ছে? আইনের ফাঁক-ফোকর গলে অনেক শিশু আজও শ্রমের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলেরই দায়িত্ব এই আইন যথাযথভাবে প্রয়োগে সচেষ্ট হওয়া।

সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন: শিশুশ্রমের অবসান শুধু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে শিক্ষক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে এক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে, সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।

প্রযুক্তির ভূমিকা: আজকের এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রযুক্তিও শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মোবাইল অ্যাপ, ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে সহজেই শিশুশ্রমের তথ্য প্রকাশ করা যায়। এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence) সাহায্যে শিশুশ্রমের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা সম্ভব।

উপসংহার: বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস আজ শুধু একটি দিবস নয়, এটি আমাদের সকলের প্রতি একটি আহ্বান। শিশুদের শৈশব ফিরিয়ে দেয়ার, তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার আহ্বান। আসুন, আমরা সবাই হাতে হাত রেখে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে লড়াই করি। আগামী প্রজন্মকে উপহার দিই একটি সুন্দর, সুস্থ শৈশব।

You May Also Like